২০০১ সালে চাঁদপুরের কিশোরী রুমাকে অপহরণপূর্বক নৃশংসভাবে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক আসামী মোঃ বাবুল শেখ (৪০)‘কে মাদারীপুর জেলার শিবচর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর শাহজাহানপুরে টিপু হত্যা,বহুল আলোচিত বিশ^জিৎ হত্যা, পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বাউল মডেলসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘদিনের পলাতক আসামিদের প্রতিনিয়ত আইনের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের প্রশংসা ও আস্থা অর্জন করেছে। এছাড়াও বিগত ০৬ মাসে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে ৯৫ টি অভিযান পরিচালনা করে ৯৬ জন আসামি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২২/০২/২০২৩ তারিখ রাত ১১৩০ ঘটিকায় মাদারীপুর জেলার শিবচর থানাধীন এলাকা হতে ২০০১ সালে চাঁদপুরের কিশোরী রুমাকে অপহরণপূর্বক নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক আসামি ১। মোঃ বাবুল শেখ (৪০), পিতা-নুরু মিয়া শেখ, সাং-দক্ষিণ বাগাদি, থানা-চাঁদপুর সদর মডেল, জেলা-চাঁদপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে এবং ভিকটিম রুমা চাঁদপুর জেলার সদর থানাধীন দক্ষিন বাগাদা গ্রামের বাসিন্দা। ভিকটিম রুমার পরিবারের সাথে ধৃত বাবুলের জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। শত্রæতার জের ধরে ধৃত বাবুল রুমার বাবাকে উচিত শিক্ষা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ০৭/০১/২০০১ তারিখে ধৃত আসামী বাবুল এবং তার আরও দুই জন সহযোগী মিলে ভিকটিম রুমাকে অপরহণ করে। পরবর্তীতে ভিকটিম রুমাকে একটি ঘরে আটকে রেখে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। পাশাপাশি বাবুলসহ তার আরও দুই সহযোগী মিলে ভিকটিম রুমাকে একের পর এক গণধর্ষণ করে। একপর্যায়ে রুমা অসুস্থ এবং মৃতপ্রায় হয়ে পড়লে সে বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আকুতি মিনতি করতে থাকে। এতে কোন কাজ না হলে একপর্যায়ে ভিকটিম চিৎকার করার চেষ্টা করলে ধৃত বাবুল তার গলা টিপে ধরে এবং অন্যান্য সহযোগীরাও তাকে মারধর করতে থাকে যার ফলে শ্বাসরোধ হয়ে ভিকটিম রুমা মারা যায়। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ভিকটিমের লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে বাবুলসহ আরও কয়েক জনের নামে চাঁদপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

উক্ত মামলায় বাবুল ২০০১ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ০৫ বছর জেল খেটে ২০০৫ সালে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থান পরিবর্তন করে বসবাস করতে শুরু করে। এছাড়াও উক্ত মামলার অপর দুই আসামী মামলার পর থেকেই পলাতক রয়েছে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক বাবুল এবং তার আরও ০২ জন সহযোগীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উক্ত ০৩ জন আসামির মধ্যে ধৃত বাবুলকে র‌্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পলাতক ০২ জন আসামীকে গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।